আশ্রয়প্রার্থীদের অশনিসংকেত: দ্রত বিতাড়নে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ পরিকল্পনা
নিজস্ব প্রতিবেদন

এই নীতির প্রভাব:
* আশ্রয়প্রার্থীদের মৌলিক অধিকার খর্ব হবে।
* আইনি সহায়তা বা শুনানি ছাড়াই মানুষকে ফেরত পাঠানো হবে।
* অনেক পরিবার ভেঙে যাবে, যাদের সদস্যদের কেউ বৈধ আবার কেউ নয়।
* অভিযোগ ছাড়াও অনেকে শুধুমাত্র প্রক্রিয়াগত কারণে আবেদনের বাইরে পড়ে যাবেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী বিরোধী নীতিতে এবার যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদনের মাধ্যমে বৈধভাবে কাজের সুযোগ পাওয়া অভিবাসীদের দ্রত বিতাড়নে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে ইউ. এস সিটিজেনশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস (ইউএসসিআইএস) এ পেন্ডিং থাকা আশ্রয় আবেদন দ্রুত শুনানী করে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের বা এক্সপেইডেট রিমুভাল আওতায় সরাসরি আবেদন বাতিল করা হবে। এমনকি আদালতে শুনানীর সুযোগ দেয়া হবে না। আর এমন ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ এ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে আশ্রয় আবেদন কারী প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ অভিবাসীকে প্রথম ধাপে বহিষ্কার করা হবে। এজন্য ইউএসসিআইএসকে এনফোর্সমেন্ট ক্ষমতা দেয়া হয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারী ক্রিস্টি নোয়েমের নির্দেশে। ইতিমধ্যে ইউএসসিআইএস সকল প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। সিএনএনের এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন বিষ্ময়কর পরিকল্পনার তথ্য জানিয়েছে।
এর ফলে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া লাখ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীর ভবিষ্যত এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছে।
সিএনএন এমন পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে তাদরে প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যেসব ব্যক্তি বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর আশ্রয় আবেদন করেছেন, তাদের আবেদনগুলো মুলতবি না রেখে সরাসরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর ফলে তারা আর আদালতের শুনানি পাবেন না এবং তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের বা এক্সপেইডেট রিমুভাল আওতায় পড়বেন।
এই পরিকল্পনার আওতায় পড়তে পারেন এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা ২.৫ থেকে ৩ লাখ এর মধ্যে হতে পারে। যাদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, কাজ করছেন এবং করও দিচ্ছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হলো বিরাট সংখ্যক অভিবাসীকে দ্রুত শনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া। এ জন্য অভিবাসন সুবিধাদানকারী সংস্থা ইউ. এস সিটিজেনশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসকে আইন প্রয়োগকারী ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। যাতে ওই সংস্থা আশ্রয় আবেদন আদালতে শুনানীর সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বাতিল ও বহিষ্কার আদেশ ঘোষণা করে। মূলত এ বহিষ্কার কার্যক্রম ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) ও কাস্টমস এন্ড বোর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) এর আওতায় রয়েছে। এখন থেকে ইউএসসিআইএস’কে এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
এসিএলইউ—এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সারাহ মেহতা জানান, ‘‘ইউএসসিআইএস এখন ইমিগ্রেশন সুবিধা প্রদানকারী সংস্থা নয় বরং অভিবাসী দমন সংস্থায় পরিণত করা হচ্ছে। প্রত্যাখ্যাত আবেদনকারীরা এখন ইমিগ্রেশন আদালতে না গিয়েই বহিষ্কারের মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত, কর্মরত এবং কর প্রদানকারী অভিবাসীরা।’’
ইউএসসিআইএস এর কর্মীদের ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল নোলস বলেন, “আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়া উচিত। এটি আন্তর্জাতিক এবং আমেরিকার আইনে তাদের অধিকার। আবেদন ছুড়ে ফেলে দেওয়া মানবিক নয়, আইনসঙ্গতও নয়।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২৫% আশ্রয়প্রার্থী স্বীকার করেছেন যে তারা বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন। বর্তমানে প্রায় ১৪.৫ লাখ আশ্রয় আবেদন ইউএসসিআইএস—এর বিবেচনায় রয়েছে। এর একটি বড় অংশ ২.৫ লাখ থেকে ৩ লাখ আশ্রয় আবেদনকারী এই ফাস্ট ট্র্যাক পরকিল্পনায় ওয়ার্ক পারমিটসসহ এদেশে অবস্থানের আইনী সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের একজন কর্মকর্তা বলেন, “যারা দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছেন, স্থানীয় সমাজে অবদান রাখছেন, হঠাৎ করে তাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল করে দেওয়া মানবিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।”
এ্যাসাইলাম সিকার্স প্রজেক্ট এর পরিচালক কনচিতা ক্রুজ এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই মানুষগুলো শুধু অভিবাসী নয়, এরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে, সমাজে, স্কুলে, কারখানায় অবদান রাখা নাগরিক। হঠাৎ করে তাদের বিতাড়িত করা মানে গোটা সমাজের ক্ষতি।”
নিজ দেশে নয়, পাঠানো হবে তৃতীয় দেশে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট থেকে। তারা আপাতত অনুমতি দিয়েছে, কিউবা বা ভেনেজুয়েলার মতো দেশের অভিবাসীদের নিজেদের দেশে না পাঠিয়ে আফ্রিকার তৃতীয় দেশে নির্বাসন দেওয়া যাবে। সুপ্রিম কোর্টের এমন রায়ের সুযোগে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন বিরোধী নীতি আরো কঠোর প্রয়োগে আশ্রয়প্রার্থীরা নিজ দেশে ফেরত যেতে না চাইলে তাদেরকে পাঠানো হতে পারে দক্ষিণ সুদান বা অন্য কোনো অজানা গন্তব্যে।
অন্যদিকে, ফ্লোরিডার গহীন এভারগেডসে তৈরি হচ্ছে নতুন ডিটেনশন সেন্টার, যার নাম “অলিগেটর আলকাট্রাজ”। এটি এমন এক এলাকা, গহীন বন যেখানে হিং¯্র পশু রয়েছে ও গহীন জলাভূমি। এখানে বন্দিদের পালানোর সম্ভাবনা খুবই কম। এই ডিটেনশন সেন্টার হবে প্রায় ৫ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন যা ট্রাম্প প্রশাসনের ৩ হাজার অভিবাসন গ্রেপ্তার দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এসবের সমন্বয়ে এখন একটি বিস্তৃত ও সুপরিকল্পিত বহিষ্কার অভিযান চালানোর রূপরেখা স্পষ্ট হচ্ছে। আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন খারিজ করে তাদের আইনি সুরক্ষা কেড়ে নেওয়া, ইউএসসিআইএস—কে আইনি ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে আনা, নতুন ডিটেনশন সেন্টার তৈরি এবং তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসনের আইনি অনুমোদন সবকিছু মিলিয়ে এটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন কৌশলের একটি পূর্ণচিত্র তৈরি করছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি শুধু মানবিক সহানুভূতির পরিপন্থী নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজার, সামাজিক স্থিতি এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমন একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কংগ্রেসে আটকে থাকা বিপুল তহবিল যদি ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে এ কার্যক্রম কতদূর গড়াবে এবং এর পরিণতি কতটা কঠিন হবে সেটি শুধু এখন সময়ের অপেক্ষায়।
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

ঘানায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ ৮ জন নিহত

স্পেনের হুমিয়ায় ঈদ উদযাপন নিষিদ্ধ: ইসলামবিদ্বেষী সিদ্ধান্তে উত্তাল মুসলিম সম্প্রদায়

উত্তেজনার মধ্যেই রাশিয়া সফরে যেতে পারেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত

পলাতকরা ষড়যন্ত্র করছে, গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান : মুশফিকুল ফজল

ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেকর্ড সংখ্যক ভারতীয় ফেরত, সাত মাসেই ১,৭০০ ছাড়াল
