মুসলিম বিদ্বেষের চরম সীমায় ভারত সরকার
মসজিদ-মাদ্রাসাসহ ৩৫০ ধর্মীয় স্থাপনা ভেঙ্গে দিলো ভারত

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতির দেশ ভারতের উত্তর প্রদেশে রাজ্য প্রশাসন প্রায় ৩০০টি মুসলিম ধর্মীয় স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে। অভিযানে মাদ্রাসা, মসজিদ, মাজার এবং ঈদগাহ সহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে, এগুলোকে ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, সরকারি জমি দখল করে অনুমতি ছাড়াই এই স্থাপনাগুলি তৈরি করা হয়েছিল।
রাজ্য প্রশাসনিক বিবৃতি অনুসারে, ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী সাতটি জেলায় (মহারাজগঞ্জ, সিদ্ধার্থনগর, বলরামপুর, শ্রাবস্তী, বাহরাইচ, লক্ষ্মীপুর খেরি এবং পিলিভিট) এই অভিযান চালানো হচ্ছে। বুধবার, একদিনে মহারাজগঞ্জে দুটি এবং শ্রাবস্তী ও বাহরাইচে একটি করে স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ২২৫টি মাদ্রাসা, ৩০টি মসজিদ, ২৫টি মাজার এবং ৬টি ঈদগাহ ভেঙে ফেলা হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
মহারাজগঞ্জ জেলার ফারেন্দা তহসিলের সেমরাহানি গ্রামে এবং নৌতানওয়া তহসিলের জুগৌলি গ্রামে নির্মিত দুটি তথাকথিত অবৈধ মাদ্রাসা ভেঙে ফেলা হয়েছে। শ্রাবস্তীর ভিঙ্গা তহসিলের কালিমপুরওয়ায় সরকারি জমিতে নির্মিত একটি ‘অননুমোদিত’ মাদ্রাসাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে, বাহরাইচে বন বিভাগের জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত একটি মাজারও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রশাসন জানিয়েছে যে এই ‘অবৈধ’ স্থাপনাগুলি ভারত-নেপাল সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। প্রশাসন জানিয়েছে যে, সরকারি জমি, বনভূমি বা অন্যান্য সরকারি সম্পত্তি দখল করে নির্মিত এই স্থাপনাগুলি ধর্মীয় রূপ ধারণ করলেও, আইন অনুসারে নির্মিত হয়নি। তবে, এই স্থাপনাগুলি নির্মাণের জন্য কোনও অনুমতি বা বৈধ নথি ছিল না।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে, ধর্মীয় স্থাপনার নামে কোনও দখল সহ্য করা হবে না। এই নির্দেশের ভিত্তিতে, পিলভিট, শ্রাবস্তী, বলরামপুর, বাহরাইচ, সিদ্ধার্থনগর এবং মহারাজগঞ্জ জেলার প্রশাসন ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে।
স্থানীয় পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং ভূমি পরিদর্শন বিভাগ এই অভিযানে অংশ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সাথে কারা জড়িত তাও তদন্ত করছে।
এই ঘটনা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। যদিও এখনও কোনও সংগঠন সরাসরি প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেনি, তবুও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তীব্র হচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন - আইন প্রয়োগের নামে রাজ্য সরকার কি একতরফা ধর্মীয় বৈষম্যের পথে হাঁটছে না?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে উত্তরপ্রদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। তবে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা মাথায় রেখে 'নির্বিচারে উচ্ছেদ অভিযান' কতটা সঠিক তা নিয়ে স্পষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।
যদিও উত্তর প্রদেশে ৩০০টি মুসলিম স্থাপনা উচ্ছেদের প্রশাসনের পদক্ষেপকে 'আইন অনুসারে' বলা হচ্ছে, তবুও এটি ধর্মীয় বৈষম্য এবং সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান এবং ভবিষ্যতের পদক্ষেপের উপর নজর রাখছে।
আরও পড়ুন- শীর্ষ ১০ টি ঘৃণ্য দেশের তালিকায় ভারত
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ / আট হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি বাসিন্দা গৃহহীন

নেতানিয়াহু হত্যা আর অপরাধে হিটলারকেও ছাড়িয়ে গেছেন: এরদোয়ান

টাইমস অফ ইসরাইলের প্রতিবেদন / ১০ দিনেই ফুরিয়ে যাবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা শক্তি

জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের সমর্থনে যৌথ বিবৃতির বিরোধিতা করে নাকচ করলো যুক্তরাষ্ট্র

পাকিস্তান সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ট্রাম্প-মোদির ফোনালাপ
