জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক জাতীয় বীর নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমরা ফ্যাসিবাদকে হঠাতে সক্ষম হয়েছি। তবে শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেই হবে না। নতুন করে মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। দেশের মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে"। 

তিনি বলেন, "এই গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছে রাষ্ট্র তাদেরকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সংবিধানের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এর জন্যই প্রয়োজন জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ। আমরা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, কোনো ধরনের টালবাহানা মেনে নেব না। কোনো বিকল্প চিন্তার সুযোগ নেই”।

সোমবার বিকেলে দেশ গড়তে  এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’র  সপ্তম দিনে বর্ণাঢ্য পদযাত্রা শেষে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড়ে স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

দলীয় শীর্ষ নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, “এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে হবে যেখানে গণতন্ত্র থাকবে, যেখানে সমতা থাকবে, যেখানে ইসসাফ থাকবে। একটি দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়াই নতুন প্রজন্মের ছাত্র জনতার আকাঙ্ক্ষা; কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিজয়ের পর থেকে নানা পক্ষ সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে গেছে। নাটোরের কর্মসূচিতে ন্যক্কারজনকভাবে বাধা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। মাত্র এক বছর আগে ব্যানার ছিঁড়ে কর্মসূচিতে যারা বাধা দিয়েছিল বাংলার জমিতে তাদের ঠাঁই হয় নাই। এখনো শিক্ষা না নিলে বাধা প্রদানকারীদের পরিণতিও তাদের মতোই হবে”।

এনসিপি আহবায়ক বলেন, “নাটোরের আটজন শহীদ রয়েছেন। তারা গণঅভ্যুত্থানে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। আমরা সেই শহীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। শহীদরা যে আকাঙ্ক্ষার জন্য, নতুন বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছিল আমরা যেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য”। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি বাংলাদেশের মৌলিক কাঠামোতে হস্তক্ষেপ করা হয় বা মৌলিক সংস্কার বাধাগ্রস্ত করা হয়, তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

সোমবার দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী থেকে সড়ক পথে নাটোরে পৌঁছান দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, প্রধান সমন্বয়কারী নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, উত্তর অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী সরজিস আলম, দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা।

নাটোর-রাজশাহী সীমান্ত এলাকা থেকে জুলাই আন্দোলনের এই নেতাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান নাটোরের নেতাকর্মীরা। তারা শহরের স্টেশন বাজারে দীর্ঘ পথ হেঁটে দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের মাদ্রাসা মোড়ে স্বাধীনতা চত্বরে পথসভায় মিলিত হন।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবিন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, কেন্দ্রীয় এনসিপি সদস্য আসিফ মুস্তফা জামাল, নাটোর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ জারজিস কাদির এবং সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়কারী নাটোর চেম্বারের সভাপতি আব্দুল মান্নাফ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা শরওয়ার নিভা, দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রধান সমন্বয়কারী নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ড. তাসনিম জারা এবং কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পথসভার পর, শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময়ের পর জুলাই মার্চের কনভয় বিকেলে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

এদিকে,  নাটোরের বনপাড়ায়  এনসিপির নেতারা আসলে দেখে নেওয়া হবে। রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন প্রচারণা চালানোর জন্য নাশকতার সন্দেহে খোরশেদ আলম নামে একজনকে নাটোর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

অন্যদিকে, নাটোরে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে শহরে লাগানো অনেক ব্যানার ফেস্টুন রবিবার গভীর রাতে সন্ত্রাসীরা ছিঁড়ে ফেলে। নাটোরের স্টেশন বাজার এবং নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ এলাকায় এই ব্যানার ফেস্টুনগুলি নষ্ট করা হয়েছে।

আরও পড়তে- জুলাই ঘোষণাপত্র-জুলাই সনদ দিতে না পারলে জুলাই উদযাপনের এখতিয়ার সরকারের নেই